Monday, July 4, 2016

দুই হোটেল কর্মচারীর লোমহর্ষক বর্ণনা: গুলশান হামলা

রাজধনীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস জঙ্গি হামলার প্রায় পুরো সময় বাথরুমে আটকা পড়েছিলেন রেস্তোরাঁর কয়েকজন কর্মচারী। ঘটনাস্থল থেকে জীবিত ফিরে আসা এমন দুই হোটেল কর্মচারীর বর্ণনায় উঠে এসেছে এ ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বিভিন্ন মুহূর্ত আর জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের কথোপকথনের নানা বিষয়।

রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে রাতের খাবারের জন্য শুক্রবারে ২৪জন গ্রাহকের রিজারভেশন ছিল। বেশিরভাগই ছিলেন বিদেশি। সন্ধ্যা ৭টা থেকেই এখানে আসা শুরু করেছিলেন তারা।

রাত আনুমানিক পৌনে ৯টা হঠাৎ বিকট শব্দ কেঁপে ওঠে হলি আর্টিজান- ভয়ঙ্কর শব্দ আর অতিথিদের চিৎকার। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই জঙ্গিদের সশস্ত্র হামলা শুরু হয়।

পরিস্থিতি ভয়াবহতা দেখে কর্মচারীদের কেউ কেউ ছুটে পালায় রেস্তোরাঁর ভেতরের বিভিন্ন অংশে। জীবন বাঁচাতে কয়েকজন লুকিয়ে পড়ে কিচেনের পাশের বাথরুমে।

রাতভর চলে গুলি ও ধারালো অস্ত্রে জিম্মি হত্যা মাঝে মাঝে বোমা বিস্ফোরণ।

শুক্রবার সকালে বাথরুম থেকে কর্মচারীদেরও নিয়ে যাওয়া হলরুমে। জঙ্গিরা জেনেশুনেই এই ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিয়েছিল।

হামলা থেকে বেঁচে ফিরে আসা রেস্তোরাঁর এসব কর্মচারী ও তার স্বজনরা চান দেশের আর কোনো পরিবারের সন্তান যেন এমন কোনো জঙ্গি কর্মকাণ্ডে নিজেদের না জড়ান। বাব-মা, পরিবার ও দেশের ভাবমূর্তি যেন নষ্ট না করেন।

প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক কর্মচারী দেশ টিভিকে বলেন, ‘আমাদের হোটেলে দুইটা গেট ছিল। দুই জন ঢুকে একজন ব্যাগ থেকে অস্ত্র বের করে আরেক জন ফায়ার করা শুরু করে। বলেন, জঙ্গিরা বুঝতে পারে আমরা বাথরুমে আছি, তখন ওরা-জঙ্গিরা রাত ১১টার দিকে এসে লাইট বন্ধ করে দেয়। আবার কিছুক্ষণ পর এসে ওরা আমাদের বের হতে বলে না বের হলে বোমা মেরে উড়িয়ে দিবো। তখন আমরা বলি আমরা বাঙালি কর্মচারী পেটের দায়ে কাজ করছি তখন তারা বলে বের হও। তারপর তারা বলে হাত মাথার উপরে দাও আর হাত নিচের দিকে রাখো।’

আরেক কর্মচারী বলেন, ‘বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি ২০ থেকে ২২ জনের মরদেহ সব পড়ে আছে। আমরা যখন বাথরুমে ঢুকেছি, রাতেই তারা মেরেছে, মরদেহ শক্ত ও রক্ত জমাট বেধে গেছে। বুলেট, জবাই সবই ছিল। মরদেহ দেখার পর আমার মাথায় হাত, বলি স্যার এগুলো কি করেছে এতোগুলো মানুষ মেরেছে আপনারা ধরতে পারেনি, এর মধ্যে একজন হাসছিল, তাদের মধ্যে একজন বলে ভাই আমরাই তো মেরেছি।’

প্রসঙ্গত: শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিস রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজানে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। রাতেই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে তারা। আইএসপিআর সংবাদ সম্মেলনে জানায়, রাতেই ৩ বাংলাদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়। শনিবার ভোরে যৌথবাহিনীর কমান্ডো অভিযান থান্ডারবোল্টের মাধ্যমে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়

তথ্য সুত্রঃ দেশ টিভি ডট কম

0 comments:

Post a Comment